কোমরে ব্যথা মানেই কিডনির সমস্যা? দেখেনিন একনজরে

কোমরের পেছন দিকে হালকা চিনচিনে ব্যথা—এমন উপসর্গ নিয়ে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ছোটেন চিকিৎসকের কাছে। আমার কিডনি কি খারাপ হয়ে গেল? শুনেছি কিডনির সমস্যায় পেছনে ব্যথা হয়?

কোমরব্যথার বেশির ভাগ রোগী মনে করেন, তাঁদের কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, কিডনিতে পাথর বা খারাপ ধরনের সংক্রমণ না হলে ব্যথা করার কথা নয়। অপর দিকে কোমরব্যথারও আছে নানা কারণ ও উৎস। বেশির ভাগ কোমরব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত। এটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়। মেরুদণ্ডের নড়াচড়া, যেমন ওঠাবসা, সামনে ঝোঁকা, হাঁটা বা দাঁড়ানো, অনেকক্ষণ ধরে কাজ করা বা শুয়ে থাকার সঙ্গে এই ব্যথা বাড়ে-কমে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, কোনো রকম ব্যথা-বেদনা ছাড়াও কিডনি খারাপ হতে পারে। কারণ, কিডনি সমস্যার উপসর্গ সাধারণত দেরিতে দেখা দেয়। তাই যাদের পরিবারে কিডনির অসুখ আছে, তাদের বেশি সচেতন থাকা উচিত। আর সাধারণ কোমরব্যথায় সাধারণত জ্বর হয় না (তবে টিউমার, টিবি ইত্যাদি ছাড়া)। দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, অরুচি, বমির ভাব ইত্যাদি আনুষঙ্গিক সমস্যা সাধারণত থাকে না। বিশ্রাম ও ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে ভালো হয়; বন্ধ করলে ব্যথা আবার ফিরে আসে।

কিডনি রোগের উপসর্গ বা ব্যথা

১. কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হওয়ার কথা। এই ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে, শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই আরাম মেলে না।

২. কিডনি সমস্যায় ব্যথা মূল উপসর্গ নয়, এতে শরীরে জল আসা, দুর্বলতা, অরুচি, বমির ভাব দেখা দেয়।

৩. সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে এই ব্যথার সঙ্গে।

৪. প্রস্রাব ঘোলাটে হয়, দুর্গন্ধ বা রক্ত থাকতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কম-বেশি হয়। রক্তশূন্যতা থাকতে পারে।

কিডনি রোগের ঝুঁকি

দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ, ব্যথানাশক বড়ি খাওয়া এবং পরিবারের কারও কিডনি অসুখ হওয়ার ইতিহাস, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক করলে, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান। এসব ঝুঁকির মধ্যে যাঁরা আছেন, তাঁদের উচিত নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শে থাকা।

কিডনি অসুখ কি বিরল এবং শুধু কি বড়দের হয়?

কথাটি একেবারে সঠিক নয়। বরং এটি একটি খুব সাধারণ অসুখ। সব বয়সের হতে পারে। বিভিন্ন মাত্রায় উপসর্গহীনভাবে চলতে থাকে। শেষ অবস্থায় গিয়ে ধরা পড়ে। যখন হয়তো তেমন কিছু করার থাকে না।

কিডনি অসুখ হলেই কি তা জানতে পারি?

না, জানতে না-ও পারতে পারি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক বা মাধ্যমিক মাত্রার অসুখ পর্যন্ত তেমন কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। দেখা যায়, শেষ অবস্থায় ধরা পড়ছে অসুখ।

কিডনি অসুখের ঝুঁকির মধ্যে থাকলে কি আগাম কিছুই করার নেই?

ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও কিডনি অসুখ প্রতিরোধ করার যায়। সচেতন হলেই প্রতিরোধ সম্ভব। কিডনিবান্ধব স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার, অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ সেবন পরিহার করলেই ঝুঁকি সত্ত্বেও কিডনি অসুখ প্রতিরোধ সম্ভব।

কিডনি পরীক্ষা কি ব্যয়বহুল?

কিডনি পরীক্ষা মোটেও ব্যয়বহুল নয়। খুব সাধারণ দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে অল্প খরচে, অতি সহজে দেশের সবখানেই জানা যেতে পারে কিডনির সর্বশেষ অবস্থা।

জল বেশি খেলে কি কিডনি ভালো থাকে?

একজন মানুষের জল কতটুকু খেতে হবে, তা নির্ভর করে তার কাজের ধরন, দেহের আকার, পরিবেশ, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর। পর্যাপ্ত জল পান কিডনিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে জানেন কি অতিরিক্ত জল পান করলে কিন্তু কিডনির ওপর চাপ পড়ে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় দৈনন্দিন আট গ্লাস জল পানই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে জল খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© 2023 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy