এই ১১টি খাবার নিয়মিত খেলে আপনার রক্তে কখনো খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়বে না, বলছে নতুন গবেষণা

আজকের দিনে যুবসমাজের একটা বড় অংশই কর্পোরেট সেক্টরে কর্মরত। আর যেমনটা সবারই জানা আছে যে বেসরসারি সংস্থায় কাজের চাপ সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে, কমে তো নাইই। আর এত কাজের চাপে না আছে ঠিক মতো ঘুমানোর সময়, না আছে সময় খাওয়ার। তাই তো উচ্চরক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এই বয়সীদের মধ্যে এতটা বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই খাবারগুলি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে রক্তে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যাবে। ফলে বাড়বে আয়ু, কমে রোগভোগের আশঙ্কা। যে যে খাবারগুলি নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে সেগুলি হল…

১. সয়াবিনঃ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কীভাবে কমাবেন তাই নিয়ে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই সয়াবিন বা সয়ামিল্ক খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে সয়া প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ৫-৬ শতাংশ হারে কমতে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে এল ডি এল কোলেস্টেরলের মাত্রা যত কমে, তত হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

২. ওটসঃ Oats (ওটস) প্রোটিন, ফাইবার আর বিটা গ্লুকোনে ভরপুর যা আমাদের কোলেস্ট্ররল সাথে অন্যান্য আরো অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আধ কাপ ওটমিলে ১৩ গ্রাম মতো প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। সঙ্গে ওটসমিলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর মাত্রায় থাকে যা এর ভিতর থাকা ভিটামিন E ও আয়রনের থেকে পাওয়া যায়। শুধু এইটুকুই নয় ওটমিলে ভিটামিন বি 1, তামা, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো পুস্টিকর উপাদান থাকে যা এটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। এর ফাইবার একদিকে যেমন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, অন্যদিকে উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।

৩. আপেল, আঙুর, জাম, সাইট্রাস ফলঃ এই ফলগুলিতে রয়েছে পেকটিন নামক একটি উপাদান, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুনভাবে কাজে আসে। তাই তো পরিবারে যদি হাই কোলেস্টেরলের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের ইতিহাস থাকে, তাহলে ভুলেও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে এই ফলগুলিকে বাদ দেবেন না যেন! প্রসঙ্গত, পাতি লেবু এবং কমলা লেবুর মতো সাইট্রাস ফল খেলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।

৪. আপেল সিডার ভিনেগারঃ ২০০৬ সালে জাপানের এক গবেষণাতে দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, আধা আউন্স আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবন কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস জল এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে ফেলুন। দিনে দুবার এই পানীয়টি খেলে দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করবে।

৫. আমলকিঃ আমলকিতে ভিটামিন সি, এমিনো এসিড ও পেকটিন আছে। পেকটিন রক্তের থেকে কোলেস্টেরল সিরাম কমায় এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও নিয়মিত আমলকি খেলে রক্তের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। আমলকি রক্ত নালীতে চর্বি জমতেও বাঁধা দেয়। এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ আমলকি পাউডার মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে পান করা শুরু করুন। কয়েক সপ্তাহেই দেখবেন কোলেস্টেরল একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

৬. বিনসঃ ফাইবার সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকবে না। কারণ ফাইবার হল খারাপ কোলেস্টেরলের যম। তাই তো এই উপাদানটির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া মানে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ বা ‘এল ডি এল’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকা।

৭. বাদামঃ কোলেস্টেরল কমাতে আখরোট এবং কাজু বাদাম দারুন কাজে আসে। আসলে এই দুটি বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর একথা তো সকলেরই জানা হয়ে গেছে যে ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তবে বেশি মাত্রায় বাদাম আবার খাবেন না যেন! তাতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। অল্প অল্প করে বাদাম খেলে দেখবেন নানা উপকার মিলবে।

৮. মধু ও পেঁয়াজের রসঃ মধুর উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর পেঁয়াজের মধ্যে আপনি নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস ছাড়াও পাবেন ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। একটি বড় লাল পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে ভালো করে পিষে, পেঁয়াজের রস চা-ছাকনিতে ছেকে নিন। পরিষ্কার এক টুকরো কাপড়ের মধ্য দিয়েও রস ছেকে বের করে নিতে পারেন। ক’চামচ রস বেরোল, তা দেখে নিয়ে তাতে সমপরিমাণ মধু দিন। অর্থাত্‍‌ চার চামচ রস হলে, চার চামচই মধু দিতে হবে। একটি কাচের ছোট পাত্রে মধু ও পেঁয়াজের রস ভালো করে মিশিয়ে, ফ্রিজে রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণটি দু-চামচ করে, দিনে চার চামচ খান। একমাসের মধ্যেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। মধুর সংস্পর্শে এই পেঁয়াজ পুরুষের যৌনশক্তির জন্যও চমত্‍‌কার ওষুধ।

৯. ধনে বীজঃ তরকারি, সালাদ, স্যুপ ইত্যাদি সব কিছুতেই ব্যবহার করা হয় ধনে বীজ। এটি মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এর কিছু ঔষধি গুনাগুণও আছে। এটি পটাসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে ও ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের উৎস বলেই অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার নিরাময় করতে পারে। কোলেস্টেরল কমাতে এটির কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে এক গ্লাস জলে এক চামচ ধনিয়া বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে একটু গরম করে নিতে হবে। তারপর পান করতে হবে। দিনে দুবার করে এই জল খেলে দেখবেন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করেছে।

১০. কমলা লেবুর রসঃ কমলা লেবু দেখতে যেমন চমৎকার এর পুষ্টিগুণও অনেক। গোলগাল আকৃতির এই ফলটি সবাই খেতে পছন্দ করেন। শীতের এই সময়ে বাজারে কমলালেবু বেশ সহজলভ্য। কমলার ভালো দিক হলো, প্রচুর ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ থাকলেও এতে চিনি বা শর্করা কম। তাই ডায়াবেটিক বা স্থূল রোগীরাও খেতে পারবেন। কমলায় খুব বেশি ক্যালরি নেই। একটা মাঝারি আকারের কমলায় প্রায় ৬২ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যাবে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং ফ্লেবোনয়েড, যা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই প্রতিদিন কম করে ২-৩ বার কমলা লেবুর রস খেতে ভুলবেন না যেন!

১১. মাছঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে প্রচুর পরিমাণে মাছ খেতে হবে। কারণ, মাছে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা রক্তচাপ কমায়। মাছ রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমায়। যারা সপ্তাহে তিনদিন অথবা এর বেশি সময় মাছ খায়, তাদের শরীরে খারাপ কলেস্টেরল কম থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মাছ খাওয়া শুরু করলে শরীরে উপকারি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy