চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে একমুঠো ফ্ল্যাক্স সিড! জেনেনিন

আজকাল বেশিরভাগ মানুষই ত্বক এবং চুলের যত্নে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করতে চাইছে। কারণ বাজারে বিক্রিত রাসায়নিক পণ্য থেকে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়, কিন্তু প্রাকৃতিক জিনিসে এই ভয়টা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে ত্বক-চুলের যত্ন নেওয়া যায়, তা জানতে মানুষ ইন্টারনেটে ভিড় জমাচ্ছেন। চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাক্স সিড কতটা কার্যকরী, এ ব্যাপারেও বহু মানুষ ইন্টারনেটে সার্চ করেছেন।
ফ্ল্যাক্স সিড প্রোটিন, ভিটামিন বি, ই, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এটি চুলের ফলিকলস পুষ্ট করে, চুলকে মজবুত ও ঘন করে, চুল বৃদ্ধি করে ও স্ক্যাল্প সুস্থ রাখে।

এছাড়াও, খুশকি এবং ইচি স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করে, অকালে চুল পেকে যাওয়া ও চুল ফাটা রোধ করে। ফ্ল্যাক্স সিড চুলের পিএইচ লেভেলে সামঞ্জস্য বজায় রাখে।

কীভাবে ব্যবহার করবেন ভাবছেন? আসুন জেনে নিন, চুলের পরিচর্যায় ফ্ল্যাক্স সিড ব্যবহার করার কয়েকটি সহজ পদ্ধতি।

১) ফ্ল্যাক্সসিড অয়েলের ব্যবহার:
ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, এটি স্ক্যাল্প এবং চুলে পুষ্টি সরবরাহ করে। দুই টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল হালকা গরম করে স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর গরম ভেজা তোয়ালে দিয়ে চুল ভালো করে মুড়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এটি করতে পারেন।

২) ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার জেল:
ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার জেল চুলের বৃদ্ধি করে এবং মাথার ত্বককেও ভালো রাখে। এই জেল তৈরি করতে, দুই কাপ ফিল্টার করা পানি এবং ১/৪ কাপ ফ্ল্যাক্সসিড নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত ফোটাতে থাকুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তরল ঘন হয়। এবার এতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস যোগ করে নাড়তে থাকুন। জেলের মতো হয়ে এলে আঁচ নিভিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন। তারপর একটা জারে ছেঁকে নিন।

৩) বেসন এবং ফ্ল্যাক্স সিডের হেয়ার মাস্ক:
বেসন চুলের ফলিকল এবং শিকড়কে মজবুত করে। আর এই হেয়ার মাস্ক স্ক্যাল্পকে কন্ডিশন করে এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখতেও সহায়তা করে। এই মাস্কটি তৈরি করতে, ২ টেবিল চামচ দইয়ের সাথে ১ টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড পাউডার এবং ১ টেবিল চামচ বেসন মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর ওই ঘন পেস্টটি স্ক্যাল্প ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন সকালে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে অন্তত একবার করুন।

৪) নারকেল তেল এবং ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার মাস্ক:
নারকেল তেল চুলকে উজ্জ্বল এবং শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে এই তেল। এই হেয়ার মাস্কটি তৈরি করতে, ১ টেবিল চামচ নারকেল তেলে ১ টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড পাউডার এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। এভাবে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঘন এবং মজবুত চুল পেতে, সপ্তাহে একবার এই মাস্কটি ব্যবহার করুন।

৫) ডিম এবং ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার মাস্ক:
ফ্ল্যাক্স সিড এবং ডিম উভয়েই চুলের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারি। ডিম স্ক্যাল্পকে কন্ডিশন করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতেও সহায়তা করে। এই মাস্কটি তৈরি করতে, একটি ডিমের সাথে ১ টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড পাউডার এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে, ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। তারপর ২-৩ ঘণ্টা রেখে, ঠাণ্ডা পানি ও মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন।

৬) লেবুর রস এবং ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার মাস্ক:
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ ফ্ল্যাক্স সিড চুল ঘন করতে দারুণ কার্যকর। লেবু খুশকির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি, স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার ও তরতাজা রাখতেও সহায়তা করে। এক টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড পাউডারের সাথে ১ টেবিল চামচ তাজা লেবুর রস এবং কয়েক ফোঁটা পানি মিশিয়ে পাতলা পেস্ট তৈরি করুন। ওই পেস্টটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে প্রায় ২০ মিনিট আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। এভাবে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করুন।

৭) কলা এবং ফ্ল্যাক্স সিড হেয়ার মাস্ক:
দুই টেবিল চামচ ফ্ল্যাক্স সিড পাউডার, একটা পাকা কলা, এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। স্ক্যাল্প ও পুরো চুলে লাগিয়ে ২ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করুন। চুল ভালো থাকবে।

৮) ফ্ল্যাক্স সিড খেতে পারেন:
উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলি ছাড়াও, আরও ভালো ফল পেতে আপনি ফ্ল্যাক্স সিড খেতেও পারেন। কাঁচা ফ্ল্যাক্স সিড চুলের ক্ষেত্রে খুবই উপকারি। ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ ফ্ল্যাক্স সিড ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই বীজের ম্যাগনেসিয়াম মেজাজ উন্নত করে এবং ঘুম বৃদ্ধি করে। এক চামচ রোস্ট ফ্ল্যাক্স সিড খান বা স্যালাড ও স্টার ফ্রায়েড সবজিতে ছড়িয়েও খেতে পারেন। ব্রেকফাস্টেও এক টেবিল চামচ গ্রাউন্ড ফ্ল্যাক্স সিড যোগ করতে পারেন। এছাড়াও, কুকিজ, কেক, মাফিন এবং পাউরুটি বেক করার আগে বা স্মুদি প্রস্তুত করার আগে দুধেও ফ্ল্যাক্স সিড গুঁড়ো করে যোগ করা যেতে পারে।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy